ইসলামের দৃষ্টিতে সুর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ

ইসলামের দৃষ্টিতে- সূর্যগ্রহণ: চাঁদ পরিভ্রমণরত অবস্থায় পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এলে পৃথিবীর মানুষদের কাছে কিছু সময়ের জন্য সূর্য আংশিক বা কখনো সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এ অবস্থাকে সূর্যগ্রহণ বলে। আরবীতে এর নাম কুসুফ। ইংরেজীতে একে Solar eclipse বলে।

চন্দ্রগ্রহণ:

পৃথিবী তার পরিভ্রমণ অবস্থায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এলে কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরল রেখায় অবস্থান করতে থাকে। তখন পৃথিবী-পৃষ্ঠের মানুষ/প্রাণীদের থেকে চাঁদ কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাকে চন্দ্রগ্রহণ বলে। আরবীতে খুসুফ এবং ইংরেজীতে Lunar eclipse বলে।

সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে আল কুরআন:

কুরআন ঘোষণা করছে যে, মহাশূন্যে যা কিছুই রয়েছে তারা প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে ঘুরছে (দ্রষ্টব্য: সূরা আল আম্বিয়া: ৩৩, সূরা ইয়াসীন: ৪০)। আল্লাহ আরও বলেন, “আকাসমুহে ও পৃথিবীতে কত নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো তারা অতিক্রম করে যায় কিন্তু সেদিকে তারা মোটেও দৃষ্টিপাত করেনা” [সূরা ইউসুফ: ১০৫]। মুর্খেরা মনে করে এসব শুধুই বস্তু। বস্তুর নিয়মেই এগুলো পরিচালিত হয়। এগুলোকে তারা এন্টি রেডিয়েশন গ্লাস দিয়ে দেখে আর আনন্দ করে। অথচ আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিস এক মহাসত্যের প্রতি ইংগিতকারী এক একটি নিদর্শন। পানিকে পানি, গাছকে গাছ এবং পাহাড়কে পাহাড় তো পশুরাও দেখে থাকে এবং নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রত্যেকটি পশু এগুলোর ব্যবহার ক্ষেত্র জানে। কিন্তু মানুষকে যে উদ্দেশ্যে ইন্দ্রিয়ানুভূতি সহকারে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য মস্তিষ্ক দান করা হয়েছে তা শুধুই এ জন্য নয় যে, মানুষ সেগুলো দেখবে এবং সেগুলোর ব্যবহার ক্ষেত্র জানবে বরং অনেক নিদর্শন আল্লাহ্ মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন এজন্য যে, মানুষ সত্যের অনুসন্ধান করবে এবং এ নিদর্শনগুলোর সাহায্যে তাকে চিনে নেবে।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, কুরআনে এ তথ্য আল্লাহর নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসেছে তখন, যখন বিজ্ঞানের কোন অস্তিত্ব পৃথিবীর বুকে কোথাও ছিল না, যখন সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে হাজারো কুসংস্কার ছিল মানুষের মনে। এমনকি ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্ধ ছিলো যে, আসলে কোনটি ঘুরছে- পৃথিবী নাকি সূর্য? কেউ বলতো পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, আবার কারোর বক্তব্য ছিল পৃথিবী নয়; সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।

সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: মুগিরা ইবনু শু’বা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, “রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র ইবরাহীমের মৃত্যুর দিনটিতেই সুর্যগ্রহণ হল। তখন আমরা সকলে বলাবলী করছিলাম যে, নাবীপুত্রের মৃত্যুর কারনেই এমনটা ঘটেছে। আমাদের কথাবার্তা শুনে রাসুল সা: বললেন: সুর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর অগণিত নিদর্শন সমুহের মধ্যে দু’টু নিদর্শন, কারুর মৃত্যু কিংবা জন্মগ্রহণের ফলে চন্দ্রগ্রহণ বা সুর্যগ্রহণ হয়না”। (বুখারী: ১০৪৩, মুসলিম: ৯১৫ – আরবী সংস্করণ)

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় একবার সূর্যগ্রহণ হলো। গ্রহণ শুরু হবার সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্রুত মাসজিদের দিকে ধাবিত হলেন এবং সকলকে মাসজিদে আসতে আহবান জানালেন। তিনি নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ করলেন যে জামায়াতে আগে কখনো এমন করেননি। অতঃপর রুকূ’তে গেলেন এবং রুকূ’ এত দীর্ঘ করলেন যা আগে কখনো করেননি। অতঃপর দাঁড়ালেন কিন্তু সাজদায় গেলেন না এবং দ্বিতীয় রাকায়াতেও ক্বিরায়াত দীর্ঘ করলেন। অতঃপর আবার তিনি রুকূ’তে গেলেন এবং তা পুর্বের চেয়ে আরও দীর্ঘ করলেন। রুকূ’ সমাপ্ত হলে দাঁড়ালেন এবং এরপর সাজদায় গেলেন এবং তা এত দীর্ঘ করলেন যে, আগে কখনো এমনটা করেননি। অত:পর সাজদা থেকে দাঁড়িয়ে প্রথম দু’রাকা’আতের ন্যায় দ্বিতীয়বারও ঠিক একইভাবে নামাজ আদায় করলেন। ততক্ষণে সূর্যগ্রহণ শেষ হয়ে গিয়েছে। নামাজ সমাপ্ত হলে তিনি আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) পেশ করে খুৎবা প্রদান করলেন, বললেন: সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর অগণিত নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টো নিদর্শন, কারুর মৃত্যু কিংবা জন্মগ্রহণের ফলে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না। অতএব, যখনই তোমরা চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করবে তখনই আল্লাহকে ডাকবে, তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ব প্রকাশ করবে এবং নামাজে রত হবে। [বুখারী: ১০৪৪, মুসলিম: ৯০১ – আরবী সংস্করণ]